নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সাম্প্রতিক সময়ে দেশে অবৈধ অনলাইন জুয়ার প্লাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে সমাজের উঠতি বয়সীদের আসক্তির বিষয়টি লক্ষ করা যাচ্ছে। ইতিপূর্বে র্যাব-১ বিভিন্ন সময় অবৈধ অনলাইন জুয়ার প্লাটফর্ম ব্যবহার করে দেশের বাহিরে অর্থ পাচারের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে। র্যাব ফোর্সেস এর সাইবার মনিটরিং টীম অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে দেশের বাহিরে অর্থপাচারের সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে প্রতিনিয়ত সাইবার নজরদারি কার্যক্রম পরিচালনা করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১ এবং র্যাব-১১ এর যৌথ অভিযানে গাজীপুরের শ্রীপুর ও রাজধানীর মালিবাগ এলাকা হতে দেশের বাহির হতে পরিচালিত বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার সাইটের কার্যক্রম দেশে পরিচালনার মাধ্যমে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া চক্রের অন্যতম মূলহোতা,মোঃ নিশাত মুন্না (২০)মোঃ কামরুল ইসলাম শুভ (২৭)মোঃ সুমন (৩৫)ও মোঃ নাজমুল হোসেন বাবু (৩১)দেরকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের হতে উদ্ধার করা হয় ১৬টি মোবাইল ফোন,১৮টি সিম কার্ড, ০১টি সিপিইউ, ০১টি মনিটর। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা অনলাইন জুয়ার সাথে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।
দুপুরে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান,বিগত দেড় বছর যাবৎ চক্রটি বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার সাইটের বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনার সাথে জড়িত। দেশের বাহির হতে পরিচালিত বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার সাইটের দেশীয় কার্যক্রম পরিচালনার অন্যতম মূলহোতা গ্রেফতারকৃত নিশাত মুন্না।
তার নেতৃত্বে চক্রের ৭-৮ জন সদস্য বাংলাদেশে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার সাইটের প্রচার, একাউন্ট খোলা, মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে অর্থ লেনদেন, হুন্ডির মাধ্যমে পাশ্ববর্তী দেশে অর্থ পাঠানোর সাথে জড়িত ছিল। মূলত ফুটবল বিশ্বকাপ, ক্রিকেট বিশ্বকাপ, আইপিএল, বিপিএল, বিভিন্ন ফুটবল লীগ/টুর্নামেন্ট ও অন্যান্য খেলাকে কেন্দ্র করে দেশেরে উঠতি বয়সের তরুণদেরকে টার্গেট করে এই অনলাইন জুয়ার প্রচার করতো চক্রটি। এ চক্রের কেউ বিভিন্ন বিদেশী বেটিং সাইটের বাংলাদেশের প্রচার/মার্কেটিং এর কাজ করত কেউ আগ্রহী ব্যক্তিদের বিভিন্ন সাইটের একাউন্ট খুলে দিত আবার কেউ একাউন্ট করা ব্যক্তির নিকট হতে অর্থ সংগ্রহ করে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে তা হুন্ডির মাধ্যমে অনলাইন জুয়ার প্লাটফর্ম পরিচালনাকারীর নিকট প্রেরণ করত।
তারা বিভিন্ন ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করে কন্টেন্টের সাথে জুয়ার সাইটের বিজ্ঞাপন, সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে বেটিং সাইটের বিজ্ঞাপন, সরাসরি মানুষের কাছে বলার মাধ্যমে এই জুয়ার সাইটের প্রচারের কার্যক্রম পরিচালনা করত। পরবর্তীতে বিজ্ঞাপন দেখে আগ্রহী ব্যক্তিরা তাদের সাথে যোগাযোগ করে একাউন্ট খুলত/তাদের প্রেরণ করা লিংক এর মাধ্যমে একাউন্ট খুলত। কোন নতুন গ্রাহক তাদের মাধমে বেটিং সাইটে একাউন্ট খুললে তারা কমিশন পেত।বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার সাইটের কার্যক্রম দেশে পরিচালনার সাথে জড়িত ছিল।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বা বিটিআরসি কর্তৃক অনলাইন জুয়া বা বাজি সংক্রান্ত বিভিন্ন এ্যাপস এবং ওয়েবসাইট ইতোপূর্বে বন্ধ করা হলে তারা ডোমেইন পরিবর্তন করে পুনরায় অনলাইন প্লাটফর্মগুলোতে জুয়া চালু করে। তারা নামে বেনামে একাধিক সিম সংগ্রহ করে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে গ্রাহকদের নিকট হতে অনলাইন জুয়ার অর্থ সংগ্রহ করতো এবং প্রাপ্ত অর্থ থেকে নিজেদের লভ্যাংশ রেখে অবশিষ্ট টাকা তারা হুন্ডির মাধ্যমে পাশ্ববর্তী দেশে অনলাইন জুয়ার প্লাটফর্ম পরিচালনাকারীর নিকট পাঠাতো বলে জানায়। তারা নিজেদের প্রাপ্ত লভ্যাংশের টাকা দিয়ে অনলাইনে জুয়া খেলতো এবং লভ্যাংশের টাকা জুয়া খেলে নষ্ট করতো বলে জানায়। তারা অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট থেকে অদ্যাবধি অর্ধ কোটি টাকার অধিক অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত নিশাত মুন্না বিভিন্ন অনলাইন বেটিং সাইটের দেশীয় কার্যক্রম পরিচালনার অন্যতম মূলহোতা। সে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যায়লয়ে তড়িৎ প্রকৌশল বিষয়ে অধ্যয়নরত।সে একটি ইউটিউব চ্যানেল ও একটি ফেইসবুক আইডি খুলে বিভিন্ন রোস্টিং/বিতর্কিত ভিডিও তৈরি করে প্রচার করতো। বিগত দেড় বছর পূর্বে সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি গ্রুপের বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপন দেখে অনলাইন জুয়ার প্রতি আসক্ত হয়।ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জুয়ার বিজ্ঞাপন দেখে আগ্রহী ব্যক্তি তার সাথে যোগাযোগ করলে সে তাদেরকে অনলাইনে বিভিন্ন জুয়ার সাইটে একাউন্ট খুলে দেয়ার বিষয়ে গ্রেফতারকৃত কামরুলের নিকট প্রেরণ করে।
গ্রেফতারকৃত কামরুল স্নাতক শেষ করে একটি মোবাইল কোম্পানির সেলস রিপ্রেসেন্টেটিভ হিসেবে কাজ করত। বিগত দেড় বছর পূর্ব থেকেই গ্রেফতারকৃত নিশাত এর সাথে তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরবর্তীতে সে গ্রেফতারকৃত নিশাত এর মাধ্যমে অনলাইন জুয়ার সাথে জড়িত হয়।গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।