খান মেহেদী :- বাংলাদেশে গত ৫ আগস্ট দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে ভাঙচুর করা হয়েছে। মামলার আসামী হয়েছেন নেতাকর্মীরা। হামলা-মামলায় জর্জরিত হয়ে চরম বিপর্যয়ে তারা। বিশেষ করে দলের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন তারাই বেশী রোষানলে পড়েছেন। ফলে দুই-তৃতীয়াংশ শীর্ষ নেতারা এখন বাড়ী-ঘর ছাড়া।
শীর্ষ নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে চলে যাওয়ার ফলে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সংগঠনের তৃনমূলের কর্মীরা হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। কর্মীরা অভিভাবক শূন্যতায় পড়ে দিশেহারা অবস্থায় রয়েছে।
একের পর এক মামলা, গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হওয়ায় দলের নেতাকর্মীরা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন। প্রায় প্রতিটি স্তরের নেতাকর্মীদের নামে মামলা হয়েছে, আরও হবে এমন আতঙ্কে নিজ নিজ বিলে অবস্থান করছেন তারা, এমন খবরও সূত্র মারফত জানা গেছে। এই অবস্থায় তারা এখন স্থানীয় শীর্ষ নেতৃবৃন্ধের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝাড়ছেন।
অপরদিকে, সারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের আসামী করা হয়েছে। মামলা আসামী ও হামলার আশংকায় এখন আওয়ামী লীগ তার অঙ্গ-সংগঠনের শীর্ষ নেতারা ঘর-বাড়ী ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন।
এছাড়াও নাম উল্লেখ্য ছাড়াও অজ্ঞাত আসামি রয়েছেন
এমন অবস্থায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে তৃণমূলের বঞ্চিত এবং এখন হয়রানীর শিকার কেউ কেউ সংবাদকর্মীদের কাছে ফোনে চরম হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, বিগত সময়ে যারা দুই হাতে অর্থ সম্পদ কামিয়েছেন তারা এখন কোথায় ? দুঃসময়ে তারা এখন আমাদের পাশে নেই কেন ? কেউ বালু মহাল দিয়ে কামিয়েছেন, কেউ পরিবহণ সেক্টর দিয়ে, মনোনয়ন বাণিজ্য করে, তদবির করে এবং দলের পদবি বিক্রি করে কামিয়েছেন, কেউ ঠিকাদারি করে, ঠিকাদারি সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করে কামিয়েছেন। আবার কেউ কেউ দখলবাণিজ্য করে,ভূমিদস্যুতা দিয়েও অঢেল ধন সম্পদ গড়েছেন। আইন প্রণেতা হয়ে ও একচেটিয়া প্রভাব খাটিয়ে অর্থ সম্পদ গড়েছেন। দলের অসহায় সাধারণ নেতাকর্মীদের দুঃসময়ে তারা এখন তাদের পাশে নেই কেন ?
হেভিওয়েট নেতাদের সঙ্গে হেভিওয়েট কর্মীদের কয়েকজন আত্মগোপন থেকেই দেশ ছেড়েছেন, এমন তথ্য পাওয়া গেছে খোদ আওয়ামী লীগ থেকেই। একের পর এক মামলা, গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হওয়ায় দলের নেতাকর্মীরা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন। প্রায় প্রতিটি স্তরের নেতাকর্মীদের নামে মামলা হয়েছে, আরও হবে এমন আতঙ্কে নিজ নিজ বিলে অবস্থান করছেন তারা, এমন খবরও সূত্র মারফত জানা গেছে।
গত ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ১৩৮টি। এর মধ্যে ১২৫টি মামলা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়। রাজধানীসহ সারা দেশ থেকে মামলাগুলো হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানিয়েছে, যারা আত্মগোপনে রয়েছেন, কতদিন থাকতে পারবেন তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ভারত থেকে শেখ হাসিনা অনেককেই ভিডিও মাধ্যমে বা মোবাইল ফোনে নানা বার্তা দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও কোনো কিছুর পরিবর্তন হয়নি। কেননা, ভিডিও মাধ্যমে এক নেতা দলীয় প্রধানের সঙ্গে কথা বলছেন এমন চিত্র ভাইরাল হলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। যে কারণে আওয়ামী নেতাকর্মীদের মনে আরও ভয়ের সঞ্চার হয়েছে।
বিশেষ করে গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার পর এ ভয় আরও বেড়েছে। বহু মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, নানা স্তরের নেতা গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছেন।
ফলে দল ও নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ বিপাকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এক মাস পেরিয়ে গেছে নেতাকর্মীরা এখন কী করবেন সে ধরণের কোনো দিকনির্দেশনা দলের দায়িত্বশীল কারও কাছ থেকে পাননি। দলের হয়ে এখন কথা বলা বা একটা বিবৃতি দেওয়ার মতোও কেউ নেই।
অবশ্য, দলের দুয়েকজন নেতার দুয়েকটি বিবৃতি ধরণের বক্তব্য পাওয়া গেলেও তারা অজ্ঞাত স্থানে থাকায় এসবের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। দলের অফিসিয়াল ই-মেইলও এখনো চালু হয়নি।
আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ রয়েছে। সেখানে মাঝে মাঝে কিছু তথ্য বা দুয়েকটি বিবৃতি পোস্ট করা হলেও সময়ের প্রাসঙ্গিকতা নেই। দেখা যাচ্ছে, কোনো একটি ঘটনা ঘটে যাওয়ার কয়েকদিন পর সংশ্লিষ্ট একটি পোস্ট শেয়ার করা হচ্ছে।
আত্মগোপনে থাকা দুয়েকজন নেতার সঙ্গে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা গেলেও তারা কোনো কোনো বিষয়ে কথা বলতে আগ্রহী হন না। বিশেষ করে তাদের রাজনৈতিক পথ কোন দিকে যাবে, সে ব্যাপারে কোনো শব্দ ব্যয় তারা করছেন না। প্রায় সবাই- ‘জানি না’, ‘কিছু বলতে পারছি না’ বলে জানিয়েছেন।
অথচ ওইসব নেতাদের জন্যই সাধারণ কর্মী-সমর্থকরা জীবন দিতেও প্রস্তুুত থাকতেন। দিনে রাতে যখনি সেসব নেতা কল দিতেন নেতার ইচ্ছে পূরণে সচেষ্ট থাকতেন। সকল সুযোগ-সুবিধা,ভাগ-বাটোরার সময় দূরে,বঞ্চিতদের কাতারে। অভিভাবকহীন নেতা কর্মী বিপদে পড়া এসব বঞ্চিত নেতাকর্মী এবং সমর্থকরা এভাবেই ক্ষোভ ঝাড়ছেন।