মুহাম্মদ এমরান
বান্দরবান:- বালু ও মাটি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা উপেক্ষা করে লামা উপজেলার ইয়াংছায় খাল খননের নামে ট্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে অবাধে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে সরকার যেমন রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে খালের পাড়ে বসবাসকারীদের ঘরবাড়ি ও ওই এলাকার আশপাশের ফসলি জমি।
ইয়াংছায় ৫ কিলোমিটার খাল খননের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়ছে। এই ০৫ কিলোমিটারের জন্য ১ কোটি ৩৫ লক্ষ ৫৭ হাজার টাকার ১টি প্যাকেজে টেন্ডার দেওয়া হয়। এই টেন্ডারটি পরিচালনা করেন সুরাজপুর মানিকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আজীম। তার-ই বিরুদ্ধেই অবাধে বালু বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, খনন কাজের সরবরাহকৃত নকশা, পরিমাপ ও বিধিমালা কোনোটিই সঠিকভাবে মানা হচ্ছে না। খালের যে স্থানে বালু পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে ট্রেজার মেশিন বসিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে। এসব বালু সরকারি জায়গায় না ফেলে টাকার বিনিময় স্থানীয়দের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বালু ফেলার জন্য খালের দু’পাশে পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা রয়েছে। কিন্তু সেখানে বালু ফেলা হচ্ছে না। টাকা নিয়ে তা স্থানীয় প্রভাবশালীদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। এমনকি, খালের তীরে বসবাসকারী দরিদ্র লোকদের কাছ থেকেও জায়গা ভরাট করে দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
ইয়াংছা খালের মুখ থেকে ইয়াংছা বাজার সংলগ্ন খালে একাধিক স্থানে ট্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এসব বালু পাইপ লাইনের মাধ্যমে নিয়ে প্রভাবশালীদের বাড়ির ভিটা, পুকুর, খাল-নালা, রাস্তা, মার্কেট, দোকানপাট ভরাটের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এবং তাদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা নিচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, ‘সরকারের কোষাগারে রয়েলিটি জমা দিয়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তিতে বালু নেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু এখানে নীতিমালা উপেক্ষা করে প্রতিদিন হাজার হাজার ঘনফুট বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে।
আরেকজনের অভিযোগ, ‘খাল ড্রেজিং করা হচ্ছে না। খালের যে স্থানে বালু উঠছে, সেখানেই শুধু মেশিন বসানো হচ্ছে। বিপুল পরিমাণ বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি, ঘরবাড়ি ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে।’
প্রতিবেদক নিজেই, আজিম চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি মোঃ কামরুল ইসলামকে আমার বাড়ির একটা জমি ভরাট করে দিতে বলেছিলাম। কিন্তু কামরুল ইসলাম আগে জায়গা দেখে এরপর টাকার পরিমাণ বলবে এমন জবাব দিয়েছেন। তাদের বিরুদ্দে ফুট প্রতি ০৩ টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
সেলিনা আক্তার বলেন, খালের পাশেই আমার বাড়ি, আমার বাড়ির সামনে থেকে ট্রেজার বসিয়ে দিন রাত বালু উত্তোলন করেছে, এতে আমার রোপণকৃত অনেক গুলো গাছ নদীর গর্ভে চলে গেছে। অতিরিক্ত বালু উত্তোলনের কারণে আমার বাড়ির পাশে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। আমারা গরীব অসহায় মানুষ। যে কোন মুহূর্তে আমার বাড়ি ভেঙ্গে নদীর গর্ভে চলে যেতে পারে। আমি এর প্রতিকার চাই।
পরিবেশবাদিরা বলেন, ‘বালু ও মাটি ব্যবস্থাপনা বিধিমালায় ট্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এতে ভূমিকম্পের প্রবণতা সৃষ্টি হওয়ার আশংকা থাকে।
আরো বলেন, ‘বালু ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী বালু বিক্রির অধিকার কোন ঠিকাদারদের নেই।ট্রেজার মেশিন দিয়ে খাল খনন করা যাবে না। উত্তোলন করা বালু সরকারি জায়গার বাইরে ফেলাও যাবে না।