নিজস্ব প্রতিবেদকঃ র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৩) প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে মাদক, অস্ত্র, জঙ্গিসহ বিভিন্ন ধরণের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে।
এরই ধারাবাহিকতায় ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে র্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর মতিঝিল এলাকা হতে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির নিকট হতে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া এবং অর্থ আত্মসাতের দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মোঃ হাসান ছালাম(৪১)কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
দুপুরে কাওরানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন,আসামী যৌথ মালিকানার ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করত। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ জেমস্ সুপার শপ লিমিটেড, জেমস্ এন্ড জুয়েলার্স, মতিঝিলে মা টেলিকম, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে উজির আলী ট্রাভেলস, কুমিল্লা কান্দিরপাড়ে ডায়মন্ড গ্যালারি লিমিটেড, গুলিস্থানে জামিল কনস্ট্রাকশন এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড, মালিবাগ টুইন টাওয়ারে এশিয়ান স্কাই শপ, বারিধারায় জেমস্ গ্রুপ, জেমস্ এ্যাগ্রোফুড লিমিটেড, জেমস্ গ্যালারি লিমিটেড, জেমস রিয়েল এ্যাস্টেট লিমিটেড। দ্রুত সময়ের মধ্যে অধিক মুনাফার আশায় সে একই সময় একাধিক প্রতিষ্ঠানে যৌথ মালিকানার ভিত্তিতে বিনিয়োগ করতে থাকে। ফলশ্রুতিতে যখন সে দেখতে পায় সে ভালো মুনাফা করতে পারে তখন আরও অধিক বিনিয়োগের জন্য তৎপরতা চালায়।এসময় সে তার ব্যবসায়িক পার্টনারসহ আত্মীয় স্বজন এবং পরিচিত লোকজনের নিকট হতে উচ্চ হারে মাসিক লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে কোটি টাকার অধিক হাতিয়ে নেয়। কিছুদিন লভ্যাংশ দিলেও পরবর্তীতে সে লভ্যাংশ দেওয়া বন্ধ করে দেয়।
আদালতে চলমান মামলা গুলোর শুনানিতেও সে কখনও হাজিরা দেয়নি। কৌশলে এসব ঋণের দায় এড়ানোর জন্য সে তার বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং দোকান বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে কুমিল্লা এবং ময়মনসিংহে জমি ক্রয় করে। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে সে পান্থপথে তার আলিশান ফ্ল্যাট বিক্রি করে ডেমরা এলাকায় বন্ধুর বাসায় গাঁঢাকা দেয় এবং পলাতক থাকা অবস্থায় মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে দেশ ছেড়ে ইউরোপে পালিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
২০০৮ সালে কুমিল্লায় মাসিক হারে লভ্যাংশ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কতিপয় লোকজনের নিকট হতে অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ঢাকা চলে আসে। এখানে এসে বসুন্ধরা সিটিতে প্রথমে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে জেমস্ সুপারশপ নামে পাথরের ব্যবসা শুরু করে। পরবর্তীতে বিভিন্ন ব্যক্তিসহ বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে কয়েক কোটি টাকা নিয়ে সে বসুন্ধরা সিটিতে আরো ০৪ টি দোকান ভাড়া করে বিভিন্ন ব্যবসা শুরু করে।
সে বিভিন্ন জায়গায় ফ্ল্যাটের ব্যবসায় এসকল অর্থ বিনিয়োগ করতে থাকে। এছাড়াও তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহকে পুজি করে ও জমি মরগেজ দিয়ে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে গ্রহণকৃত ঋণসমূহের বিপরীতে প্রথম কয়েকটি মাসিক কিস্তি পরিশোধ করে পরবর্তীতে তা বন্ধ করে দেয়। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যক্তিদের নিকট হতে চেক জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ গ্রহণ করে তা পরিশোধে অস্বীকৃতি জানায়। পরবর্তীতে ২০১৮ সাল থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দায়েরকৃত মামলা চলতে থাকে এবং ২০২০ সালে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে তখন থেকে সে রাজধানীর ডেমরা, উত্তরা, কেরানীগঞ্জ ও মতিঝিল এলাকায় বিভিন্ন সময় গাঁঢাকা দিয়ে থাকে। তার বিরুদ্ধে অর্থঋণ জালিয়াতি, চেক জালিয়াতি ও নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়াও ব্যক্তিগত জীবনে তার স্ত্রীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় ২০১৯ সাল থেকে সে এবং তার পরিবার আলাদা বসবাস করে। তার ০২ ছেলে ও ০২ কন্যা সন্তান রয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, জেমস্ সুপারশপে (বসুন্ধরা সিটি) পার্টনারশীপে মাসিক ৫০ হাজার টাকা করে লভ্যাংশ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে গিয়াস উদ্দিন নামক এক ব্যাক্তির নিকট হতে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে আত্নসাৎ করে।পরবর্তীতে গিয়াস উদ্দিন নিরূপায় হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করে। উক্ত মামলায় ধৃত আসামির নামে ২০২২ সালে বিজ্ঞ আদালত যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করেন এবং উক্ত রায়ের গ্রেফতারি পরোয়ানার প্রেক্ষিতে র্যাব-৩ কর্তৃক তাকে গ্রেফতার করা হয় ।গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন ।