জেলা প্রতিনিধি, গাইবান্ধা
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে গোপনে ম্যানেজিং কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে খামার ধুবনী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খামার ধুবনী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নিয়মিত কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য জহুরুল ইসলামকে সভাপতি করে একটি এডহক কমিটি করা হয়। এডহক কমিটি পরবর্তীতে নিয়মিত কমিটি গঠনের ব্যবস্থা করার থাকলেও প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীন এককভাবে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। প্রধান শিক্ষক সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ম্যানেজিং কমিটি গঠনের জন্য প্রিসাইডিং নিযুক্ত করার জন্য আবেদন করেন। এতে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. তারিকুল ইসলাম সাবুকে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নির্বাচনি তফশিল ঘোষণা করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে বহুল প্রচার করতে বলেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক
শিক্ষার্থীদের অভিভাবক তফশিল ঘোষণার বিষয়টি গোপন রেখে পছন্দের লোকদের কমিটিতে রেখে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করেন। বিষয়টি দাতা, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা কেউ জানতো না।
পরে ম্যানেজিং কমিটি গঠনের বিষয়টি জানতে পেরে ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়া অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিতু জাহান মোহনার বাবা মুকুল আকন্দ নির্বাচন প্রক্রিয়া বাতিলসহ যাচাই-বাছাই করে নতুন ভোটার তালিকা প্রণয়ন করার দাবি জানিয়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. তারিকুল ইসলাম কাছে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগটি আমলে না নিয়ে কোন প্রকার তদন্ত ছাড়াই গত ১৫ অক্টোবর প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচনের জন্য তার দপ্তরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের ডেকে সভাপতি নির্বাচন সম্পন্ন করেন।
অভিভাবকরা জানান, প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীন ম্যানেজিং কমিটি গঠনের জন্য নির্বাচনি তফশিল ঘোষণার বিষয়টি গোপন রেখে পছন্দের লোকদের কমিটিতে রেখে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করেছে। তফশিলের বিষয়টি স্কুলের দাতা, শিক্ষার্থীদের অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরাও জানেনা। প্রধান শিক্ষক নির্বাচনে নিযুক্ত প্রিসাইডিং কর্মকর্তার যোগসাজশে করেছে। অবৈধভাবে কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন করে স্বচ্ছ্বভাবে ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে নির্বাচনের দাবি জানান অভিভাবকরা।
ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী মেহের নিগার বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠনের জন্য স্যারেরা ক্লাসে কোনদিন কিছু বলে নাই। আর স্কুলে কোন নির্বাচন হয় নাই।
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিতু জাহান মোহনা বলেন, স্যারেরা আমাদের কোনো দিন কমিটি গঠনের বিষয়টি জানায়নি। শুনেছি ভোটার তালিকা হওয়ার পর কমিটি গঠন হয়েছে। আমি স্কুলের নিয়মিত শিক্ষার্থী হওয়ার পরে ভোটার তালিকা থেকে আমার বাবার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিতালি আক্তার মিম বলেন, স্কুলের কমিটি গঠন হলো অথচ আমরা শিক্ষার্থীরা জানলাম না। স্যারেরা আমাদের এবিষয়ে কিছু বলে নাই। আমরা চাই আমাদের অভিভাবকদের ভোটে কমিটি গঠন করা হোক। এতে স্কুলের শিক্ষার মান বাড়বে।
শিক্ষার্থীর অভিভাবক আমিনুল ইসলাম বলেন, খামার ধুবনী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠনে কোন নির্বাচন হয়নি। এনিয়ে প্রচার বা মাইকিং করা হয়নি। অবৈধভাবে কমিটি গঠনের জন্য প্রধান শিক্ষকসহ জড়িতদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
অভিযোগকারী মুকুল আকন্দ বলেন, বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য পদে নির্বাচন করতে চেয়েছিলাম। এজন্য প্রধান শিক্ষক পরিকল্পিতভাবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় আমার নাম বাদ দেয়। এছাড়া বিধি মোতাবেক এলাকায় কোনভাবে প্রচার না করে গোপনে তার পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটির গঠন করে। এনিয়ে প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোন কাজ হয়নি। তিনি কোন তদন্ত করে প্রধান শিক্ষকের যোগসাজশে অবৈধ পন্থায় তার দপ্তরে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত করেন।
এডহক কমিটির সভাপতি জহুরুল ইসলাম বলেন, আমি এডহক কমিটির সভাপতি হলেও নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি গঠনের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আমাকে কিছুই বলেনি। শুনেছি কমিটি গঠন করেছে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন প্রিসাইডিং অফিসার। এতে আমার কোনো দায় নেই। আমার উপর ওঠা অভিযোগ সঠিক নয়।’
প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. তারিকুল ইসলাম সাবু বলেন, তফশিলের পর প্রধান শিক্ষককে প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে সবাইকে জানানোর জন্য বলা হয়। তিনি করেছেন কি-না এটা আমি জানি না। মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ের শেষ দিন পর্যন্ত একের অধিক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিরাপত্তার কথা ভেবে প্রধান শিক্ষকসহ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের ডেকে সভা করে তাদের ভোটে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচন করা হয়। এসব বিধি মোতাবেক করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মমিন মণ্ডল বলেন, প্রচার-প্রচারণায় বা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কোন অনিয়ম হয়ে থাকলে তদন্ত করে বোর্ডকে জানানো হবে। বোর্ড চাইলে কমিটি বাতিল করে দিবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।