
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ফরিদপুর জেলা পুলিশের নথি বলছে— সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার ক্যাশিয়ার ও ভাগ্নে ইব্রাহিম শেখ ওরফে কলম মেম্বার দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডার। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কলম মেম্বার বিরোধী মত দমনে সক্রিয় ভাবে জড়িত ছিলো। তার মাধ্যমে স্থানীয় বিএনপি-জায়ামাতের নেতাকর্মীরা বারবার নির্যাতিত হয়েছে।
সম্প্রতি (রবিবার) দ্রুত বিচার আইনের একটি মামলায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে কলম মেম্বার। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে আদালতে সাতদিনের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ। এই দুর্ধর্ষ আওয়ামী লীগ ক্যাডারের বিরুদ্ধে ঢাকায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা রয়েছে। খিলগাঁও থানার ওই মামলায় ১৪৪ নম্বর আসামি সে। ২০ জানুয়ারি মামলাটি হয়।
পুলিশের নথিতে বলা হয়েছে— দ্রুত বিচার আইনে হওয়া মামলার আসামি ইব্রাহিম শেখ ওরফে কলম মেম্বার একজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী এবং ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার থাকাকালে বিরোধীমত দমনে আসামি কলম মেম্বার ব্যাপক ভূমিকা রাখে। ফরিদপুর জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জিয়াউল হাসান মিঠুর সশস্ত্র ক্যাডার এই কলম মেম্বার। ২০২২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বিকালে ফরিদপুর স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মীসভা ছিল। যেখানে যুবলীগ নেতা জিয়াউল হাসান, কলম মেম্বারসহ ২০/৩০ জনের একটি দল কর্মীসভাস্থলে প্রবেশ করে। তাদের হাতে ছিল— রামদা, হকিষ্টিক, লোহার পাইপ, হাতুড়ি। দেশীয় এসব অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সভাস্থলে প্রবেশ করে জনমতে আতংক ও ক্ষমতার দাপট দেখাতে থাকে। একই সাথে ত্রাস সৃষ্টি এবং নগদ দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে যুবলীগ নেতা জিয়াউল হাসান ও কলম মেম্বারের নির্দেশে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে উপস্থিত সবাই কর্মীসভায় হামলা চালায়। সশস্ত্র আসামিরা স্বেচ্ছাসেবদ দলের নেতাকর্মীদের এলোপাতাড়ি কুপিয়ে এবং সভাস্থল ভাঙচুর করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
কোতোয়ালি থানার এসআই ফাহিম ফয়সাল তরফদার বলেন, ‘কলম মেম্বার ফরিদপুর সহ আশপাশের এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করত। সে মূলত আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডার ছিল। তাছাড়া জুয়া, মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী হিসেবেও পরিচিতি আসে তার। ঢাকার একটি মামলারও আসামি সে। তার নানান অপকর্ম এখন সামনে আসছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে আদালতে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসবে।’
কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ভয়ংকর আসামি ইব্রাহিম শেখ ওরফে কলম মেম্বার। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে নানান অপকর্মে জড়িত ছিল সে।’
পুলিশ বলছে, স্থানীয় রাজনীতির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় তাঁতীলীগের সদস্য ছিল এই ইব্রাহিম শেখ
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাবেক দুর্নীতিবাজ ডিএমপি কমিশনার (বর্তমানে কারান্তরীণ) আছাদুজ্জামান মিয়ার লোকাল ক্যাশিয়ার ছিলেন এই ইব্রাহিম শেখ ওরফে কলম মেম্বার। আছাদুজ্জামান মিয়ার হয়ে এলাকায় আধিপাত্য বিস্তার ও ক্ষমতার অপব্যহার করত সে। অন্যের জমি-দোকান দখল, সালিসের নামে টাকা আদায়, চাঁদাদাজিসহ নানান অভিযোগ রয়েছে ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে। তাছাড়া পুলিশে চাকরি, বদলি এসব দেখভাল করতে ইব্রাহিম শেখ। আছাদুজ্জামান মিয়া তাকে ভোট কারচুপির মাধ্যমে জোর জবরদস্তি করে স্থানীয় আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার বানিয়েছিলো। তবে অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে তাকে বরখাস্ত হতে হয়েছিল।
সূত্র বলছে, সাবেক দুর্নীতিবাজ ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার হয়ে ইব্রাহিম শেখ ওরফে কলম মেম্বার এলাকায় জমি দখলসহ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয়ে ভিন্নমত পোষণকারীদের ওপর দমন পীড়নের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড ছিল সে। মূলত আছাদুজ্জামান মিয়ার অবৈধ সম্পদ দেখভাল করত। আছাদুজ্জামান মিয়া গ্রেপ্তার হলে তার সম্পদ বাঁচাতে ও হাতবদলে মাঠে ছিল ইব্রাহিম শেখ। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া মৌজায় ইব্রাহিম শেখ কলমের নামে ১৬০ শতাংশ জমি আছে। যার বাজার মূল্য কমপক্ষে পাঁচ কোটি টাকা। এই জমির প্রকৃত মালিক সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। এছাড়াও ‘সবুজ ছায়া’ নামে ইব্রাহীম শেখ একটি ঋণদান সংস্থার মালিক। যেখানে কমপক্ষে ১০ কোটি টাকার বিনিয়োগ আছে তার।কিন্তু দৃশ্যত তার কোনো ব্যবসা নেই। সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার অবৈধ অর্থেই এই সুদের প্রতিষ্ঠানটি (সবুজ ছায়া) পরিচালিত হতো।