নিজস্ব প্রতিবেদকঃমানব সংসারের যাপিত জীবনের এক উল্লেখযোগ্য কাহিনীর চিত্রায়ন ঘটেছে আউয়াল চৌধুরীর উপন্যাস ‘আফসানা’তে।
আফসানা উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। খোলা বাতাসের মতো উড়ো যার জীবন। হঠাৎ তার জীবনে ঘটে অনাকাঙ্খিত এক দুর্ঘটনা। যা তাকে সমাজ থেকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় অনেকদূরে। এই উপন্যাসের মাধ্যমে সমাজের অগণিত নারীর নিরব গোঙানীর আওয়াজ শোনা যায়।
বাসায় পার্টি করতে গিয়ে রেপ হয় আফসানা। জীবন পাল্টে যায়। বুঝতে পারে তার শরীরে অন্য একজন মানুষের অস্তিত্ব চলে এসেছে। সমাজ, স্বজন সবার কাছে কিভাবে মুখ দেখাবে? মানসিকভাবে বিধ্বস্ত আফসানার জীবনে আসে অমিত। ফুটফুটে এক শিশুর জন্ম হয়, নাম ‘আত্মা’। সুখ বেশি দিন স্থায়ী হয় না। আফসানার ঠাঁই হয় বস্তিতে। পদে পদে বিপদ আর লোভাতুর সাপদের হাত থেকে বাঁচতে একজন নারীর একা লড়াই। আফসানা ক্লান্ত শ্রান্ত কিন্তু আত্মার জন্য আবার উঠে দাঁড়ায়।
অন্যদিকে অমিত মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ঘুরছে রাস্তায় রাস্তায়। ছোট্ট আত্মা দিনে দিনে বড় হয়ে উঠছে। কিন্তু আফসানার লড়াই যেন শেষ হয় না। তার জীবনে কী আবার প্রেম আসে? কার পরিচয়ে বড় হচ্ছে ‘আত্মা’? একদিন অমিতের সঙ্গে দেখা হয়। একে অন্যকে কি চিনতে পারে? অমিতের পরিণতি বিয়োগান্তিক ধারায় প্রবাহিত হয়। যা পাঠককে চমকিত করবে। এমনই গল্প নিয়ে সমাজ সংসারের বাস্তবতা ও এক ভিন্নধর্মী গল্পের অবতারণা করেছেন লেখক।
লেখক আউয়াল চৌধুরী একজন সাংবাদিক, সাহিত্যিক, গবেষক ও সংগঠক। প্রায় দুই দশক আগে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার স্বজন সমাবেশে যুক্ত থাকার মাধ্যমে সাংবাদিকতার পাঠ বা লেখালেখির হাতেখড়ি হয়। এরপর নানা মাধ্যমে কাজ করে তিনি এখন একুশে টেলিভিশনে সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত আছেন। শুধু লেখালেখি নয় সমাজের অবহেলিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে ‘ল্যাম্প বাংলাদেশ’ নামে সামাজিক সংগঠন তৈরি করে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এর আগে ২০০৯ সালে সমাজকে আলোকিত করার মানসে ফেনীর ছাগলনাইয়ায় নিজ এলাকায় তিনি ‘চৌধুরী সমাজ কল্যাণ পাঠাগার’ প্রতিষ্ঠা করে সমাজে নতুন অনুরণন তৈরি করেন।
ফলে সমাজে নানামুখী কাজ করতে গিয়ে সমাজের উচ্চবিত্ত জীবন থেকে শুরু করে নিম্ন বিত্তের জীবন ধারাকে দেখার, জানার ও বুঝার সুযোগ পেয়েছেন। তাই তিনি উপন্যাসে প্রান্তিক মানুষের জীবন সংগ্রাম ও মানবিকতাকেও টেনে এনেছেন। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর এই শ্রমিকরা যে তাদের পারিবারিক বেষ্টনীতে এখনো মানবিক এবং একটা সুশৃঙ্খল সম্মানজনক ধারায় পরিচালিত তা তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন।
আউয়াল চৌধুরী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ফেনী সরকারি কলেজে পড়াকালিন সময় থেকেই তিনি লেখার চেষ্টা করতেন। বিশেষ করে বিভিন্ন পত্রিকা ম্যাগাজিনে ছোট গল্প, প্রবন্ধ, নানা ঘটনা লিখে পাঠাতেন।
তিনি বর্তমানে পরিবেশ ও বজ্রপাতের ক্ষতি নিয়ে, প্রান্তিক কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নে গবেষণামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।
আউয়াল চৌধুরী তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ইতিমধ্যে নানা সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ‘সংশপ্তক-২০২২’ অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় শেরে বাংলা একে ফললুল হক গবেষণা পরিষদ তাকে ‘শেরে বাংলা গোল্ডেন অ্যাওয়ার্ড’ ও এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ও গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা’য় অবদানের জন্য অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে।
আউয়াল চৌধুরীর উপন্যাস ‘আফসানা’ বেরিয়েছে ‘মুক্তদেশ’ প্রকাশনী থেকে। স্টল নাম্বার ৫৪৯ ও ৫৫০। বইটির প্রকাশক জাবেদ ইমন, এর প্রচ্ছদ করেছেন রাহমান রোমেল।