নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল ও মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি খুন, চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই চক্রের সাথে জড়িত বিভিন্ন সংঘবদ্ধ ও সক্রিয় সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত কাজ করছে র্যাব-৪
এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল মানিকগঞ্জ জেলার চাঞ্চল্যকর টুটুল হত্যা মামলার দীর্ঘ ৮ বছর ধরে পলাতক আসামী’কে গ্রেফতার করার জন্য ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ইং বিকালে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন পলাশবাড়ী কামাল গেইট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী সুরুজ মিয়া সৌরভকে (২৪) ’কে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামী’কে জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার বিবরণে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত আসামী ও ভিকটিম টুটুল একই এলাকার বাসিন্দা এবং একই সাথে পড়াশুনা করতো। ভিকটিম টুটুলের সাথে প্রধান আসামী সুজনের পুরাতন বাইসাইকেল ক্রয়-বিক্রয়ের সূত্র ধরে দুই পরিবারের মধ্যে একটি বিরোধ সৃষ্টি হয় যাকে কেন্দ্র করে গত ইং ২৩ মে ২০১৪ ইং দুপুর অনুমান ০৩.ঘটিকার সময় বাদী আরমান আলীর ছোট ছেলে টুটুল (১৩) নিজ বাড়ী হতে সাইকেলযোগে তেওতা বাজারে এসে জমিদার বাড়ীর গেটে অবস্থিত চায়ের দোকানে আসলে এজাহারভুক্ত প্রধান আসামী সুজন ও তার সহযোগী আসামীরা পূর্ব শত্রুতাবশত বাদীর ছোট ছেলে টুটুলকে একা পেয়ে সেখান থেকে কৌশলে অজ্ঞাতনামা স্থানে নিয়ে বাদীর ছেলে টুটুলের পরিহিত শার্ট বেধে ধারালো অস্ত্র দ্বারা বাম পায়ের হাটুর নিচ হতে পুরুষাঙ্গ এবং গলা ও মাথার ডান পাশের অংশ কুপিয়ে নৃশংসভাবে খুন করে লাশ ঘুম করার উদ্দেশ্যে তেওতা জমিদার বাড়ির অন্ধ কুপে ফেলে দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
একপর্যায়ে বাদী আরমান আলী তার ছোট ছেলে টুটুলকে সম্ভাব্য সকল স্থানসহ নিকট আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ী খোঁজাখুজি করে কোথায় না পেয়ে শিবালয় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করে। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজনের সংবাদের ভিত্তিতে শিবালয়ের থানা পুলিশ সে অজ্ঞাতনামা লাশটি উদ্ধার করে এবং স্থানীয় লোকজন অজ্ঞাতনামা লাশটি বাদীর আরমান আলীর ছোট ছেলে টুটুলের লাশ বলে সনাক্ত করে।
পরবতীর্তে মৃতের পিতা আরমান আলী ঘটনাস্থলে পৌছালে অজ্ঞাতনামা লাশটি তার ছেলে টুটুলের বলে সনাক্ত করে বাদী হয়ে প্রধান আসামী সুজন ও তার সহযোগী আসামী সুরুজ, লিটন, মোক্তার, রাজু, আবু তালেবসহ অজ্ঞাতনামা আরো ২/৩ জনকে আসামী করে গত ইং ১ জুন ২০১৪ ইং শিবালয় থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন ।
মামলা হওয়ার পর প্রধান আসামী সুজন ও তার সহযোগী আসামী, লিটন, মোক্তার, রাজু এবং আবু তালেবগণদেরকে শিবালয় থানা পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার করে। মামলা হওয়ার পর থেকেই সহযোগী আসামী সুরুজ আত্মগোপনে চলে যায়। অত্র মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা এজাহারনামীয় প্রধান আসামী সুজন ও তার সহযোগী আসামী সুরুজ, লিটন, মুক্তার, রাজু, আবু তালেবগণদের অভিযুক্ত করে বিজ্ঞ আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন।পলাতক আসামী মোঃ সুরুজ মিয়া মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় প্রথম থেকেই গত ০৮ বছর পলাতক ছিলো।
আসামীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় ১৯৯৮ সালে মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় থানাধীন নারায়ন তেওতা এলাকায় জন্মগ্রহণ করে। সে স্থানীয় এলাকার একটি স্কুল থেকে ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত পড়াশুনা করে।
আত্মগোপনে থাকাকালীন সময় আসামীর জীবনযাপনঃ আসামীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হওয়ায় এবং ঐ মামলায় সে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় গ্রেফতার এড়ানোর লক্ষ্যে লোক চক্ষুর আড়ালে নিজেকে আত্মগোপন করেন।
পরিচিত লোকজন থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখার জন্য ২০১৪ সালের শেষের দিকে ঢাকায় চলে আসে। গত ০৮ বছর ধরে আসামি মোঃ সুরুজ মিয়া নাম পরিবর্তন করে মোঃ সৌরভ নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রথমে আব্দুল্লাহপুর, আশুলিয়াসহ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিল।
পরবর্তীতে আসামী মোঃ সুরুজ মিয়া আশুলিয়া থানা এলাকায় অবস্থান করে গার্মেন্টস চাকুরী করে আত্মগোপনে থেকে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। গ্রেফতারকৃত আসামীকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।