ঢাকা ১২:০০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৩০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
আমিরাতের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন প্রধান উপদেষ্টা দুদক এনফোর্সমেন্ট ইউনিট একদিনে তিন অভিযান পরিচালিত ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে একদিনে ডিএমপির ১৯০৬ মামলা ইতালীতে উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়ায় আটকে নির্যাতনের ঘটনায় মূলহোতাদের গ্রেপ্তার করছে র‍্যাব প্রবাসীর অর্থ লোপাটের সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের দুই সদস‍্য’কে গ্রেফতার করেছে: এয়ারপোর্ট এপিবিএন বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ৪৮ জনকে গ্রেফতার করেছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ! ফরিদপুর বালক বালিকা কাবাডি প্রতিযোগিতার উদ্বোধন ডিবি পরিচয়ে দুর্ধর্ষ ডাকাতি,সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের ১২ সদস্য’কে গ্রেফতার করেছে ধানমন্ডি থানা পুলিশ মদুনাঘাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আশরাফের নীরব চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ ভুক্তভোগীদের অভিযোগ !

বিলুপ্তির পথে দেড় হাজার বছরের তামা-কাঁসার শিল্প!

  • মাসুদ রানা
  • আপডেট সময় : ০১:৪৮:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৩
  • ৩৪৪৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে কাঁসা-পিতলের ব্যবহার। একসময় আমাদের দেশে তামা, কাঁসা ও পিতলের জিনিসপত্র ব্যবহারের খুব প্রচলন ছিল। এর অবস্থান ছিল নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্রের তালিকায় শীর্ষে।বিশেষ করে রান্নাঘরের তৈজসপত্র ও ব্যবহার্য সামগ্রীর ক্ষেত্রে পিতলের থালা, বাটি, গ্লাস, রান্নার হাঁড়ি ইত্যাদি ব্যবহার করা হতো।আগে পিতলের কলসি, ঘটি, বাটি, হুক্কা, সুড়াই তামার পাতিল এগুলো প্রায় ঘরেই দেখা যেত। যা একরকম ঐতিহ্যে পরিণত হয়েগিয়েছিল। কিন্তু এই কাঁসা-পিতল শিল্পের ঐতিহ্য আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। সময়ের পালাক্রমে এই শিল্প এখন বিলুপ্তির পথে।

হাজার বছর আগে থেকেই বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষজন পারিবারিক ও ধর্মীয় কাজে এসব জিনিসপত্র ব্যবহারকরে আসছেন। বিদেশি পর্যটকেরা একসময় কাঁসা-পিতলের মধ্যে কারুকার্যখচিত বিভিন্ন দেবদেবী ও জীবজন্তুর প্রতিকৃতি দেশেনিয়ে যেত। আগে সব সম্প্রদায়ের মানুষ এসব জিনিসপত্র ব্যবহার করলেও এখন শুধু ধনাঢ্য সনাতন ধর্মাবলম্বীরাই তামা, কাঁসা, পিতলের জিনিস সীমিত আকারে ব্যবহার করেন। অনেকে পূজার কাজেও কাঁসা পিতলের ব্যবহার করেন। অনেক সনাতনধর্মাবলম্বীরা এখনও কাঁসার থালায় খাবার পরিবেশন আতিথেয়তার একটা অংশ মনে করেন।

তামা, কাঁসার জিনিসপত্রের মধ্যে কাস্তেশ্বরী, রাজভোগী, রাঁধাকান্তি, বংগী, বেতমুড়ি, রাজেশ্বরী, রত্নবিলাস, ঘুটা ও কলতুলা নামেরয়েছে থালা ও গ্লাস। কৃষ্ণচুড়া, ময়ুরকণ্ঠী,ময়ুর আঁধার, মলিকা ইত্যাদি নামে পাওয়া যায় জগ। রাজভোগী, জলতরঙ্গ, রামভোগী, গোলবাটি, কাজল বাটি, ঝিনাই বাটি, ফুলতুলি বাটি ইত্যাদি নাম রয়েছে বাটির নাম। বোয়াল মুখী, চন্দ্রমুখী, চাপিলামুখী, পঞ্চমুখী, ঝিনাইমুখী নামে রয়েছে চামচ। এছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় সকল কিছুই তামা কাঁসা ও পিতলের পাওয়াযায়। পূজা-অর্চনায় মঙ্গল প্রদীপ, কোসাকুর্ষি, মঙ্গলঘট, ইত্যাদি কাঁসার বাদ্যযন্ত্র উল্লেখযোগ্য।

ঢাকা জেলার বৃহত্তম উপজেলা ধামরাই এলাকায় কাঁসা-পিতলের জন্য বিখ্যাত ছিল। শুরু থেকেই তামা কাঁসা পিতল শিল্পেরসঙ্গে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন জড়িত। নিত্যব্যবহার্য সামগ্রীর ধরন বদলে যাওয়ায় বর্তমানে এ শিল্পে ধস নেমেছে। গত ১৫বছরে কাঁসা-পিতলের দাম বেড়েছে প্রায় ১২ গুণ। এক কথায় ঊর্ধ্বমূল্যের কারণে প্রতিযোগিতার বাজারে টিকতে পারছে না তামা, কাঁসা, পিতলের শিল্প। তবুও পৈতৃক পেশাকে ধরে রাখার জন্য বর্তমানে শাঁখারি বাজার, ইসলামপুর ও মিটফোর্ডে প্রায় ১০-১৫টিপরিবার আজও কাঁসাশিল্পের সঙ্গে জড়িত।

অতুল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, এই ব্যবসা আমাদের বংশ পরম্পরায় টিকে আছে। আমার বাবা মাখন লাল বিশ্বাস এই ব্যবসাকরতেন। তারই ধারাবাহিকতায় আমিও এই ব্যবসা করছি। আগে অনেকেই ব্যবসা করতো। ধীরে ধীরে এই তামা, কাঁসা, পিতলের জিনিসপত্রের চাহিদা কমছে। অনেকে ঠিকমতো তাদের দোকানের কর্মচারীর বেতনও দিতে পারেনি। ব্যবসায় লসদিয়েছে।  ফলে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলেছে। তামা, কাঁসা, পিতলের জিনিসপত্র বিক্রির আগের সেই সোনালী যুগ নেই। এক কথায়ঐতিহ্য হারাতে বসেছে এই ব্যবসা।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

আমিরাতের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন প্রধান উপদেষ্টা

বিলুপ্তির পথে দেড় হাজার বছরের তামা-কাঁসার শিল্প!

আপডেট সময় : ০১:৪৮:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে কাঁসা-পিতলের ব্যবহার। একসময় আমাদের দেশে তামা, কাঁসা ও পিতলের জিনিসপত্র ব্যবহারের খুব প্রচলন ছিল। এর অবস্থান ছিল নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্রের তালিকায় শীর্ষে।বিশেষ করে রান্নাঘরের তৈজসপত্র ও ব্যবহার্য সামগ্রীর ক্ষেত্রে পিতলের থালা, বাটি, গ্লাস, রান্নার হাঁড়ি ইত্যাদি ব্যবহার করা হতো।আগে পিতলের কলসি, ঘটি, বাটি, হুক্কা, সুড়াই তামার পাতিল এগুলো প্রায় ঘরেই দেখা যেত। যা একরকম ঐতিহ্যে পরিণত হয়েগিয়েছিল। কিন্তু এই কাঁসা-পিতল শিল্পের ঐতিহ্য আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। সময়ের পালাক্রমে এই শিল্প এখন বিলুপ্তির পথে।

হাজার বছর আগে থেকেই বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষজন পারিবারিক ও ধর্মীয় কাজে এসব জিনিসপত্র ব্যবহারকরে আসছেন। বিদেশি পর্যটকেরা একসময় কাঁসা-পিতলের মধ্যে কারুকার্যখচিত বিভিন্ন দেবদেবী ও জীবজন্তুর প্রতিকৃতি দেশেনিয়ে যেত। আগে সব সম্প্রদায়ের মানুষ এসব জিনিসপত্র ব্যবহার করলেও এখন শুধু ধনাঢ্য সনাতন ধর্মাবলম্বীরাই তামা, কাঁসা, পিতলের জিনিস সীমিত আকারে ব্যবহার করেন। অনেকে পূজার কাজেও কাঁসা পিতলের ব্যবহার করেন। অনেক সনাতনধর্মাবলম্বীরা এখনও কাঁসার থালায় খাবার পরিবেশন আতিথেয়তার একটা অংশ মনে করেন।

তামা, কাঁসার জিনিসপত্রের মধ্যে কাস্তেশ্বরী, রাজভোগী, রাঁধাকান্তি, বংগী, বেতমুড়ি, রাজেশ্বরী, রত্নবিলাস, ঘুটা ও কলতুলা নামেরয়েছে থালা ও গ্লাস। কৃষ্ণচুড়া, ময়ুরকণ্ঠী,ময়ুর আঁধার, মলিকা ইত্যাদি নামে পাওয়া যায় জগ। রাজভোগী, জলতরঙ্গ, রামভোগী, গোলবাটি, কাজল বাটি, ঝিনাই বাটি, ফুলতুলি বাটি ইত্যাদি নাম রয়েছে বাটির নাম। বোয়াল মুখী, চন্দ্রমুখী, চাপিলামুখী, পঞ্চমুখী, ঝিনাইমুখী নামে রয়েছে চামচ। এছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় সকল কিছুই তামা কাঁসা ও পিতলের পাওয়াযায়। পূজা-অর্চনায় মঙ্গল প্রদীপ, কোসাকুর্ষি, মঙ্গলঘট, ইত্যাদি কাঁসার বাদ্যযন্ত্র উল্লেখযোগ্য।

ঢাকা জেলার বৃহত্তম উপজেলা ধামরাই এলাকায় কাঁসা-পিতলের জন্য বিখ্যাত ছিল। শুরু থেকেই তামা কাঁসা পিতল শিল্পেরসঙ্গে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন জড়িত। নিত্যব্যবহার্য সামগ্রীর ধরন বদলে যাওয়ায় বর্তমানে এ শিল্পে ধস নেমেছে। গত ১৫বছরে কাঁসা-পিতলের দাম বেড়েছে প্রায় ১২ গুণ। এক কথায় ঊর্ধ্বমূল্যের কারণে প্রতিযোগিতার বাজারে টিকতে পারছে না তামা, কাঁসা, পিতলের শিল্প। তবুও পৈতৃক পেশাকে ধরে রাখার জন্য বর্তমানে শাঁখারি বাজার, ইসলামপুর ও মিটফোর্ডে প্রায় ১০-১৫টিপরিবার আজও কাঁসাশিল্পের সঙ্গে জড়িত।

অতুল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, এই ব্যবসা আমাদের বংশ পরম্পরায় টিকে আছে। আমার বাবা মাখন লাল বিশ্বাস এই ব্যবসাকরতেন। তারই ধারাবাহিকতায় আমিও এই ব্যবসা করছি। আগে অনেকেই ব্যবসা করতো। ধীরে ধীরে এই তামা, কাঁসা, পিতলের জিনিসপত্রের চাহিদা কমছে। অনেকে ঠিকমতো তাদের দোকানের কর্মচারীর বেতনও দিতে পারেনি। ব্যবসায় লসদিয়েছে।  ফলে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলেছে। তামা, কাঁসা, পিতলের জিনিসপত্র বিক্রির আগের সেই সোনালী যুগ নেই। এক কথায়ঐতিহ্য হারাতে বসেছে এই ব্যবসা।