কপিল উদ্দিন কক্সবাজার প্রতিনিধি
দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর সত্যি হল কক্সবাজারের মানুষের স্বপ্ন। বহুদিন ধরে এই জেলায় ট্রেন আসার গল্প শুনে আসলেও ৫ নভেম্বর কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনে সন্ধ্যা ৬ টা ২০ মিনিটে ট্রেন পৌঁছালে শতশত মানুষ ঝিনুকের আদলে নির্মিত রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেন দেখতে ভিড় জমায়। এ সময় উৎসুক জনতা আনন্দে হুইচই করতে থাকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদৌলতে জেলাবাসি আজ স্বপ্নের ট্রেন দেখতে ফেল। , চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন কক্সবাজার পর্যন্ত আসার পথে প্রতিটি নির্মিত জংশনে থামিয়ে থামিয়ে আসার কারণে কক্সবাজার পৌছাতে সন্ধ্যা পর্যন্ত গড়াই। নতুন নির্মিত রেল লাইনে স্বপ্নের ট্রেন দেখার জন্য প্রতিটি ষ্টেশনে উৎসুক জনতা ভীড় জমায়।
উল্লেখ, প্রথমবারের মতোচট্টগ্রাম-দোহাজারী থেকে কক্সবাজার এসেছে পরীক্ষামূলক ট্রেন।৫ নভেম্বর রবিবার সকাল ৯টা ২০ মিনিটের দিকে ট্রেনটি চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ছেড়ে সন্ধ্যা ৬ টায় জিআইবিআর স্পেশাল ট্রেনটি কক্সবাজার আইকনিক রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছায়।
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মিত হওয়ায় আকাশ পথ উন্মুক্ত হওয়ার পর রেলপথেও যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ায় উচ্ছ্বসিত পর্যটন শহরের মানুষ।কক্সবাজার আইকনিক রেলওয়ে স্টেশনে কথা হয় উৎসুক জনতার সঙ্গে তারা জানান, ট্রেন চলাচলের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করা গেলে পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন সহ দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখবে এই জেলার অর্থনীতি । বিশেষত বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণ আরও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। যাত্রীবাহী ট্রেন ছাড়াও পণ্যবাহী ট্রেন চালু হলে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের পণ্য আনা-নেওয়া সহজ হবে, এছাড়াও দেশের সাথে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে নানা ধরণের শিল্প কারখানা গড়ে তুলতেও সহায়ক হবে।
কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের চান্দেরপাড়ায় ঝিনুক আকৃতির আইকনিক স্টেশন দেখতে আসা দর্শনার্থীরা বলেন, ট্রেন চালু হওয়ায় এই জেলায় যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন সহজ হবে। তেমনি পর্যটক শিল্পেও উন্নয়ন ঘটবে। কক্সবাজার সড়ক পথ, আকাশ পথের পর বাকি ছিল রেল যোগাযোগ এটি আজ বাস্তবে পরিণত হয়েছে ।
রেলপথ পরিদর্শন অধিদপ্তরের সরকারি রেল পরিদর্শক রুহুল কাদের আজাদ বলেন, জিআইবিআর স্পেশাল ট্রেন সকাল ৯টা ২০ মিনিটের সময় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়েছে। সর্বোচ্চ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। উন্নত যত প্রযুক্তি রয়েছে সবগুলোই এই রেলপথে ব্যবহার করা হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় রেল ভায়াডাক্ট এ পথে নির্মাণ করা হয়েছে। এতে করে রেললাইন হয়ে হয়েছে সুপার ট্র্যাক। ১২০ কিলোমিটার গতিতে এ রেলপথে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। এ প্রকল্পে যুক্ত থাকতে পেরে খুব ভালো লাগছে। সবাই আনন্দিত।
স্থানীয়রা আরও জানান, কক্সবাজারে আগে কোনো রেলপথ ছিল না। স্বাধীনতার অর্ধশতবর্ষ পর কক্সবাজার রেল আসছে। আজ প্রথমবারের মতো ট্রেন চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে আসছে যেটি একটি বড় আনন্দের বিষয়।
দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মো. সুবক্তগীন বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের ইন্সপেকশন টিম দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ পরিদর্শন করবেন। রোববার সকাল ৮টায় চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের পথে ট্রেন চলবে। এই ট্রেনে করে তারা এই রেলপথের বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়াবে এবং আস্তে আস্তে আসবে। একই সঙ্গে বিভিন্ন এই নব-নির্মিত রেলপথের ব্রীজগুলোতেও দাঁড়াবে। মূলত উদ্বোধনের আগে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ খুঁটিনাটি সব বিষয় পর্যবেক্ষণ করবেন বাংলাদেশ রেলওয়ের ইন্সপেকশন টিম। সকালে ট্রেনটি ছাড়লেও কক্সবাজার পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকেল হয়ে যাবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১১ নভেম্বর কক্সবাজার থেকে প্রধানমন্ত্রী দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করবেন।
দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের আওতায় ৩৯টি বড় সেতু, ২২৩টি ছোট সেতু ও কালভার্ট, বিভিন্ন শ্রেণির ৯৬টি লেভেল ক্রসিং। হাতি চলাচলের জন্য রয়েছে আন্ডারপাস। দুইটি আন্ডারপাস আছে। এছাড়া নির্মাণ করা হয়েছে ৯টি স্টেশন। স্টেশনগুলো হলো- দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজরা, ইসলামাবাদ, রামু ও কক্সবাজার।