চট্টগ্রামে দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে সাহসী ভূমিকা রেখে আলোচনায় আসা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চাকরিচ্যুত উপ সহকারী পরিচালক শরিফ উদ্দিন তার বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ ও প্রচার করার প্রতিবাদ জানিয়েছেন যমুনা গ্রুপ কর্তৃপক্ষের কাছে। বৃহস্পতিবার (৯ ই মার্চ) যমুনা গ্রুপের মালিকানাধীন দৈনিক পত্রিকা ‘ দৈনিক যুগান্তর ‘ ও যমুনা টেলিভিশনে ইতিপূর্বে প্রচারিত প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন শরিফ উদ্দিন।
প্রতিবাদের সেই চিঠি পাঠানো হয়েছে দেশের অন্যান্য গণমাধ্যমেও। শরিফ উদ্দিন জানান, বৃহস্পতিবার কুরিয়ার সার্ভিসের পাশাপাশি রেজিস্ট্রি ডাক যোগেও চিঠি পাঠানো হয়েছে যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান বরাবর। সকালে স্বশরীরে প্রতিবাদের সেই চিঠি গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ে নিয়ে যান শরীফ উদ্দিনের ভাই। তবে যমুনা গ্রুপের কোন কর্মকর্তা সেই চিঠি গ্রহন করতে রাজি হন নি।
যমুনা টেলিভিশন ও যুগান্তর পত্রিকায় শরীফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ এনে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ফেব্রুয়ারী মাসে। প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য সত্য নয় দাবি করে প্রতিবাদলিপিতে শরীফ উদ্দিন দাবি করেছেন, বিচারাধীন মামলার বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে যুমনা টেলিভিশন ও দৈনিক যুগান্তরে। এটি আইনের ব্যতয়। এছাড়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা অভিযোগগুলো এরআগেও দুদকের পক্ষ থেকে তদন্ত করা হয়েছিলো। ‘
প্রতিবাদের চিঠিতে যুক্তিযোদ্ধার সন্তান শরীফ উদ্দিন দাবি করেছেন, ‘ সাংবাদিকতার নীতি অনুযায়ী তার কোন বক্তব্য নেয়নি যুগান্তর বা যমুনা টেলিভিশনের সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক।
শরীফ উদ্দিন উল্লেখ করেন, আমি যখন কাজ করি আমার কার্যালয় সেই বিষয়ে অবগত থাকে। আমার সাথে থাকে দুদকের টিম, আমার অন্যান্য সহকর্মী। আমি চট্টগ্রামে বেদখল হওয়া ৫০ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ করেছিলাম, যা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা রয়েছে। দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশনে সেসব অনুসন্ধানের বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।
চট্টগ্রামে থাকাকালে তিনি কক্সবাজারের সিআইপি খেতাবপ্রাপ্ত এক ব্যবসায়ীকে মিথ্যা মামলায় রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করেছেন এমন অভিযোগ আনা হয়েছিলো গণমাধ্যম দুটিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়মবহির্ভূতভাবে এক ব্যবসায়ীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ ও নোটিশ দিয়ে ডেকে নিয়ে গ্রেফতার করেছেন। শরীফ তার প্রতিবাদের চিঠিতে বলেন, দুদকের নিজস্ব কোন বাহিনী বা কর্মকর্তাদের কাছে কোন অস্ত্রও নেই যে, কাউকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের জন্য। উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বা আদালতের অনুমতি ব্যতিরেকে কাউকে গ্রেফতার করাও সম্ভব নয়।
শরীফ উদ্দিন চৌধুরীকে অপসারণের বিরুদ্ধে করা রিটের শুনানি মুলতবি (স্ট্যান্ডওভার) রেখে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে করা আপিল শুনানির জন্য গত ৯ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য্য ছিলো সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে, এর দুদিন আগে যমুনা টেলিভিশন ও যুগান্তর পত্রিকায় শরীফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। একই সময়ে চট্টগ্রামে গ্যাস জালিয়াতি নিয়ে শরীফ উদ্দিনের করা একটি মামলা এফআরটি’র ( ফাইনাল রিপোর্ট ট্রু) অনুমোদন দেন দুদকের পরিচালক (তদন্ত) জহিরুল ইসলাম। কর্ণফুলী গ্যাসে স্পষ্ট দূর্নীতির অভিযুক্তদের দায়মুক্তি দেবার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে দেশের অধিকাংশ গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
শরীফ উদ্দিন এক সময় চট্টগ্রামে কর্মরত ছিলেন। ওই সময় তিনি কক্সবাজারে ৭২টি প্রকল্পে সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি, রোহিঙ্গা নাগরিকদের ২০টি এনআইডি ও পাসপোর্ট জালিয়াতি, কর্ণফুলী গ্যাসে অনিয়মসহ বেশ কিছু দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। দুর্নীতির অভিযোগের প্রমাণ পাবার পর তিনি বহু লোকের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিলেন। ধারনা করা হচ্ছে সেসব দুর্নীতিবাজ চক্র শরিফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
সচেতন নাগরিক কমিটি ( সনাক) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আকতার উল কবির বলেন, চাকরি যাবার প্রায় দেড় বছর পর দেশের দুটি সুনামধন্য গণমাধ্যম শরীফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে একতরফা প্রতিবেদন প্রচার করেছে, যেগুলো আদালতে বিচারাধীন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে চাকরিচ্যুত শরীফ উদ্দিন কি নিজের জন্য বড় প্রকল্পে জড়িত দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করেছিলেন? নাকি দুদকের অনুমোদন সাপেক্ষে রাষ্ট্রের জন্য করেছিলেন। তার চাকরি যাবার পর থেকে সবার মনে এই প্রশ্নটি ঘুরপাক খাচ্ছে। দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) শরীফ উদ্দিন যদি নিজের জন্য এত বড় ঝুঁকি নিতেন তাহলে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে উল্টো দুর্নীতিবাজদের পক্ষ নেওয়ার সুযোগ ছিল। ‘
দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮-এর বিধি ৫৪(২)তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছিলো। শরীফ উদ্দিন দেশজুড়ে আলোচিত একজন দুদক কর্মকর্তা যিনি বড় ধরনের একাধিক দুর্নীতির ঘটনা উদঘাটন করছেন এবং যেসব প্রভাবশালী মহল বা সিন্ডিকেট সেসব দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার চেষ্টা করেছিলেন, তার সাত বছরের চাকরিকালে। গ্যাস জালিয়াতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জন করার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দায়ের করা মামলার আসামীরা দুদকের চাকরিহারা এই কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন।