ঢাকা ০৬:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৫ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
দৌলদিয়া নৌ পুলিশ কর্তৃক দেশীয় অস্ত্রসহ নৌকা আটক চাঞ্চল্যকর শাহাদাৎ হত্যা মামলার আসামি জহিরুল’কে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-২ জুলাই অভ্যুত্থানের হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অত্যাধুনিক রিভলবার ৮০ রাউন্ড কার্তুজসহ সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হান্নানকে গ্রেফতার করেছে:ডিবি ফরিদপুরে বি-৭১ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সহায়তা ফ্রী মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত রাজবাড়ী-২ আসনে নির্বাচন করবেন এনডিএম মহাসচিব মোমিনুল আমিন নানা আয়োজনে অফিসার্স ক্লাবে সরস্বতী পূজা উদযাপন ফ্রিডম ইন্টারন্যাশনাল এর বিবৃতি: তাপসী তাবাসসুম উর্মি-কে হয়রানি না করার আহ্বান ফরিদপুরে হাফ ভাড়া দাবিতে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ”গাড়ির চালকদের অভিমানের সুর যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডে ববি হাজ্জাজের নিন্দা

স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে নৃশংসভাবে হত্যায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি ফরহাদ মন্ডল’কে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৩

  • মাসুদ রানা
  • আপডেট সময় : ০৩:৩০:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৪
  • ৩২৫৬ বার পড়া হয়েছে

 র‍্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন(র‍্যাব-৩)প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল ও মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি খুন, চাঁদাবাজি, চুরি, কিশোর গ্যাং, ডাকাতি ও ছিনতাই চক্রের সাথে জড়িত বিভিন্ন ধরণের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে।

এরই ধারাবাহিকতায় র‍্যাব-৩ এর একটি বিশেষ আভিযানিক দল গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানাধীন চন্দ্রা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ২০১১ সালে নাটোরের সিংড়ায় যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে নৃশংসভাবে হত্যার চাঞ্চল্যকর ঘটনায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মোঃ ফরহাদ মন্ডল (৪০)কে ২০ জানুয়ারি ২০২৪ ইং ৮. ঘটিকায় গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত ফরহাদ জানায়, ভিকটিম মোছাঃ ফাতেমা বেগমকে ২০০১ সালে ইসলামী শরিয়তের বিধান মোতাবেক বিবাহ করে। বিবাহের সময় যৌতুক হিসেবে নগদ ১৫,০০০/-টাকা শ্বশুরের নিকট হতে গ্রহন করে। পরবর্তীতে তাদের পরিবারে দুইটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। একপর্যায়ে স্ত্রীকে আরও যৌতুকের টাকা নিয়ে আসার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। স্বামীর কথায় ভিকটিম ফাতেমা তার বাবা-মাকে যৌতুকের বিষয়টি জানায়। ভিকটিমের বাবার পরিবারেও অভাব অনটনে থাকায় তার বাবা আর যৌতুকের টাকা দিতে পারবেনা বলে জানায়।

ভিকটিমের বাবা আর কোন টাকা দিতে পারবেনা বিষয়টি জানতে পেরে ধৃত ফরহাদ ও তার বাবা-মা এবং বড় ভাই ভিকটিম ফাতেমাকে অমানুষিক নির্যাতন করতে শুরু করে। ভিকটিম তার শ্বশুর বাড়ির অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তার বাবা-মাকে বিষয়টি জানায়। ভিকটিমের বাবা-মা মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে কয়েক দফায় আরো ৫০,০০০/- টাকা যৌতুক হিসেবে প্রদান করে। শ্বশুর বাড়ি থেকে দেয়া যৌতুকের টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় আবারও ধৃত আসামি তার বাবা-মা, বড়ভাই মিলে ভিকটিমকে আরও টাকা নিয়ে আসার জন্য চাপ প্রয়োগ করে এবং শারিরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতে থাকে।

ঘটনাটি ভিকটিম তার বাবা-মাকে জানালে ভিকটিমের বাবার কাছে টাকা না থাকায় ঘটনার ১১/১২ দিন পূর্বে মেয়ের জামাইকে একটি গরুর বাছুর প্রদান করে। কিন্তু ভিকটিমের বাবা টাকা না দেয়ায় ৭ ডিসেম্বর ২০১১ ইং রাতে ভিকটিম ফাতেমাকে তার স্বামী ফরহাদ অমানুষিকভাবে শারিরিক নির্যাতন করে এবং একপর্যায়ে ভিকটিমকে গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যার পরে ধৃত ফরহাদ ও তার বাবা-মা এবং বড়ভাই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়।

ঘটনার পরদিন সকালে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি জানতে পেরে ভিকটিমের বাবা-মাকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খবর দেয়। ভিকটিমের বাবা-মা ঘটনাস্থলে এসে তার মেয়েকে ধৃত ফরহাদের শয়ন কক্ষের মেঝেতে রক্তাত্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। ভিকটিমের গলায় ও বাম চোখের উপরে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায়। ঘটনার পরে ৯ ডিসেম্বর ২০১১ ইং ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে ধৃত ফরহাদ মন্ডল, তার বড় ভাই মোঃ ফজল, বাবা হামিদ আলী এবং মা মোছাঃ ফরিদা বেগমকে আসামী করে নাটোর জেলার সিংড়া থানায় যৌতুকের জন্য মৃত্যু ঘটানোর কারণে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।

উক্ত মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ ধৃত ফরহাদকে আসামি করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। পরবর্তীতে ফরহাদ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে ৭/৮ মাস জেল খেটে জামিনে মুক্তি পায়। জামিনে মুক্তি পেয়ে এক বছর পর সে বিদেশে (ওমানে) চলে যায়। দীর্ঘ ৩ বছর ওমানে প্রবাস জীবন শেষ করে পূনরায় বাংলাদেশে নিজ বাড়িতে প্রত্যাবর্তন করে। বিদেশ থেকে আসার পর সে দ্বিতীয় বিবাহ করে। বিবাহ করে তার স্ত্রীকে নিয়ে নিজ এলাকা ছেড়ে গাজীপুরের চন্দ্রা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতে শুরু করে।

সেখানে সে একটি গার্মেন্টসে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।ঘটনার দীর্ঘ ১৩ বছর পর বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে বিজ্ঞ আদালত গত ১৭ জানুয়ারি ২০২৪ ইং ফরহাদের মৃত্যুদন্ড রায় প্রদান করেন। গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

দৌলদিয়া নৌ পুলিশ কর্তৃক দেশীয় অস্ত্রসহ নৌকা আটক

স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে নৃশংসভাবে হত্যায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি ফরহাদ মন্ডল’কে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৩

আপডেট সময় : ০৩:৩০:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৪

 র‍্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন(র‍্যাব-৩)প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল ও মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি খুন, চাঁদাবাজি, চুরি, কিশোর গ্যাং, ডাকাতি ও ছিনতাই চক্রের সাথে জড়িত বিভিন্ন ধরণের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে।

এরই ধারাবাহিকতায় র‍্যাব-৩ এর একটি বিশেষ আভিযানিক দল গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানাধীন চন্দ্রা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ২০১১ সালে নাটোরের সিংড়ায় যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে নৃশংসভাবে হত্যার চাঞ্চল্যকর ঘটনায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মোঃ ফরহাদ মন্ডল (৪০)কে ২০ জানুয়ারি ২০২৪ ইং ৮. ঘটিকায় গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত ফরহাদ জানায়, ভিকটিম মোছাঃ ফাতেমা বেগমকে ২০০১ সালে ইসলামী শরিয়তের বিধান মোতাবেক বিবাহ করে। বিবাহের সময় যৌতুক হিসেবে নগদ ১৫,০০০/-টাকা শ্বশুরের নিকট হতে গ্রহন করে। পরবর্তীতে তাদের পরিবারে দুইটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। একপর্যায়ে স্ত্রীকে আরও যৌতুকের টাকা নিয়ে আসার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। স্বামীর কথায় ভিকটিম ফাতেমা তার বাবা-মাকে যৌতুকের বিষয়টি জানায়। ভিকটিমের বাবার পরিবারেও অভাব অনটনে থাকায় তার বাবা আর যৌতুকের টাকা দিতে পারবেনা বলে জানায়।

ভিকটিমের বাবা আর কোন টাকা দিতে পারবেনা বিষয়টি জানতে পেরে ধৃত ফরহাদ ও তার বাবা-মা এবং বড় ভাই ভিকটিম ফাতেমাকে অমানুষিক নির্যাতন করতে শুরু করে। ভিকটিম তার শ্বশুর বাড়ির অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তার বাবা-মাকে বিষয়টি জানায়। ভিকটিমের বাবা-মা মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে কয়েক দফায় আরো ৫০,০০০/- টাকা যৌতুক হিসেবে প্রদান করে। শ্বশুর বাড়ি থেকে দেয়া যৌতুকের টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় আবারও ধৃত আসামি তার বাবা-মা, বড়ভাই মিলে ভিকটিমকে আরও টাকা নিয়ে আসার জন্য চাপ প্রয়োগ করে এবং শারিরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতে থাকে।

ঘটনাটি ভিকটিম তার বাবা-মাকে জানালে ভিকটিমের বাবার কাছে টাকা না থাকায় ঘটনার ১১/১২ দিন পূর্বে মেয়ের জামাইকে একটি গরুর বাছুর প্রদান করে। কিন্তু ভিকটিমের বাবা টাকা না দেয়ায় ৭ ডিসেম্বর ২০১১ ইং রাতে ভিকটিম ফাতেমাকে তার স্বামী ফরহাদ অমানুষিকভাবে শারিরিক নির্যাতন করে এবং একপর্যায়ে ভিকটিমকে গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যার পরে ধৃত ফরহাদ ও তার বাবা-মা এবং বড়ভাই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়।

ঘটনার পরদিন সকালে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি জানতে পেরে ভিকটিমের বাবা-মাকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খবর দেয়। ভিকটিমের বাবা-মা ঘটনাস্থলে এসে তার মেয়েকে ধৃত ফরহাদের শয়ন কক্ষের মেঝেতে রক্তাত্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। ভিকটিমের গলায় ও বাম চোখের উপরে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায়। ঘটনার পরে ৯ ডিসেম্বর ২০১১ ইং ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে ধৃত ফরহাদ মন্ডল, তার বড় ভাই মোঃ ফজল, বাবা হামিদ আলী এবং মা মোছাঃ ফরিদা বেগমকে আসামী করে নাটোর জেলার সিংড়া থানায় যৌতুকের জন্য মৃত্যু ঘটানোর কারণে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।

উক্ত মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ ধৃত ফরহাদকে আসামি করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। পরবর্তীতে ফরহাদ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে ৭/৮ মাস জেল খেটে জামিনে মুক্তি পায়। জামিনে মুক্তি পেয়ে এক বছর পর সে বিদেশে (ওমানে) চলে যায়। দীর্ঘ ৩ বছর ওমানে প্রবাস জীবন শেষ করে পূনরায় বাংলাদেশে নিজ বাড়িতে প্রত্যাবর্তন করে। বিদেশ থেকে আসার পর সে দ্বিতীয় বিবাহ করে। বিবাহ করে তার স্ত্রীকে নিয়ে নিজ এলাকা ছেড়ে গাজীপুরের চন্দ্রা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতে শুরু করে।

সেখানে সে একটি গার্মেন্টসে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।ঘটনার দীর্ঘ ১৩ বছর পর বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে বিজ্ঞ আদালত গত ১৭ জানুয়ারি ২০২৪ ইং ফরহাদের মৃত্যুদন্ড রায় প্রদান করেন। গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।