নিজস্ব সংবাদদাতা জিয়াউল হক আকন :- বাকেরগঞ্জ উপজেলায় ৮৭ বছর বয়সে জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও ভ্যানগাড়িতে ছুটছেন বই নিয়ে দেশ গড়ার লক্ষ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা এনছান আলী খান। বীর মুক্তিযোদ্ধারা কখনও তাদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করেননি। এমনই একজন নিঃস্বার্থ মুক্তিযোদ্ধা এনছান আলী খান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ তার শক্তি ও সাহস যোগায় মুক্তিযুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধা এনছান আলী খান ১৯৩৬ সনে বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের বিহারি পুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আব্দুল গনি খান ছিলেন একজন কৃষক। তিনি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কাফিলা হাই স্কুলে লেখাপড়া করেন।
১৯৭১ সালে তিনি পাকিস্তান সরকারের পুলিশের চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ট্যাংক-কামান আর বন্দুক নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সৈন্যরা। ১৯৭১ এর রণাঙ্গনে মুক্তিকামী সৈনিক ২ নম্বর সেক্টরে ক্যাপ্টেন হায়দার আলীর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধা এনছান আলী খান ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। তখন পুলিশ কর্মরত অবস্থায় সোনারগাঁও, কাচপুর, মুগ্ধাপাড়া,আদমজী জুট মিল সংলগ্ন এলাকায় দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ঢাকা সারদা পুলিশ লাইনে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশরক্ষায় জীবনকে তুচ্ছ করে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন।
তিনি বর্তমানে বই বিক্রেতার পেশাকে পাথেয় করে এক সন্তানের পিতা সংসার চালনা করছেন। একটি ঝুপড়ি ঘরে তার মানবেতর জীবনযাপন চলছে। জীবনের এই ক্রান্তিলগ্নে ৮৭ বছর বয়সেও স্বপ্ন দেখে আগামী দিনগুলোর।
তিনি আরও বলেন, আমি ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে এখন ২০ হাজার টাকা সম্মানী ভাতা পাচ্ছি। সম্মানী ভাতা দিয়ে আমার সংসার চলে যায়। গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে ভ্যান গাড়িতে বই বিক্রি করি মানুষের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ইসলামী শিক্ষার দিনের আলো ছড়িয়ে দেয়ার জন্য। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারে সেজন্য আমি বাকেরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের পল্লীর পাড়ায় পাড়ায় ঘুড়ে ঘুড়ে ভ্যান গাড়িতে করে বর্তমান প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে বিনা লাভে স্বাধীনতার ইতিহাস,বঙ্গবন্ধুর জীবনীসহ বিভিন্ন রকমের বই বিক্রি করতেছি। এতে করে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে।
জীবনের শেষ মুহূর্তে নানান রকম রোগে আক্রান্ত হয়ে শরীরের শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। ভ্যান গাড়ি যেন এখন চলছে না। দুই পায়ে দেখা দিয়েছে ব্যথা। পাড়া মহল্লায় ভ্যান গাড়ি নিয়ে বই বিক্রি করতে কষ্ট হচ্ছে। আমি বাড়ি ঘর চাই না। সরকার আমাকে একটি দোকান ঘর দিলে ভ্যান গাড়িতে নয় দোকানে বসে বই বিক্রি করতাম। আমি একটি দোকান ঘরের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত দরখাস্ত দিয়েছিলাম। জেলা প্রশাসক বাকেরগঞ্জ সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) কে লিখিতভাবে নির্দেশ দিয়েছিলেন আমার গ্রামের বাড়ি বোথরা বাজারে একটি দোকান ঘরের ভিটি দেয়ার জন্য। আজ এক বছর পার হয়ে গেলেও সেই জমি আমি এখনো পাইনি। সদ্য বিদায়ী এসিল্যান্ড আবুজর মো: ইজাজুল হক উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার ফোরকান কে নির্দেশ দিয়েছিলেন আমাকে একটি দোকান ঘরের ভিটি বুঝিয়ে দেয়ার জন্য। এক বছরে কতবার যে ভূমি অফিসে গিয়েছি তার কোন হিসেব নেই। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের থেকে হয়রানির শিকার হচ্ছি। বারবার কথা দিয়েছ আমাকে অনেকেই কিন্তু কথা রাখেনি কেউ! একটি দোকান ঘর পেলে কষ্ট থাকতো না। বরিশাল জেলা প্রশাসকসহ উপজেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।